মার্চ ২৮, ২০২৫

৩০ বছর ধরে ছেলে ফেরার অপেক্ষায় গাজার এক বৃদ্ধ মা।

0
IMG-20250227-WA0025

স্টাফ রিপোর্টার : রুহুল আমিন শিশির।

পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক হলো মা আর ছেলের সম্পর্ক। কারন মায়ের নাড়ি ছেড়া ধন তার সন্তান। তেমনি এক মা সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন। জানা গেছে মা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্দী ছেলে ফিরে আসবে বলে, সেই আনন্দে গাজার বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন নাজাত নামের সেই মা। যদি কিছু পাওয়া যায়, তা দিয়ে ছেলেকে স্বাগত জানাতে পারেন তিনি। সেই বন্দির মা।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপন

নাজাত বলেন, আমি গাজার ওমার আল মুখতার স্ট্রিটে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, কী-ই বা দিতে পারি আমার ছেলেকে? জামা-কাপড়ে ভরে ফেলি ব্যাগ, টুথপিকও ভরেছিলাম ব্যাগে। কিন্তু কই আমার ছেলে ?
গত শনিবার ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরাইলি বন্দীদের বিনিময়ে যেসব ফিলিস্তিনি বন্দীকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেই তালিকায় ছিল মা নাজাতের ছেলে দিয়ার নামও। কিন্তু ১২ ঘণ্টা ধরে গাজার ইউরোপিয়ান হাসপাতালে বন্দী বিনিময়ের স্থানে অপেক্ষা করেন মা নাজাত। কিন্তু বিধি বাম ৬২০জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে ফেরত পাঠালেও নাজাতের ছেলে দিয়াকে পাঠায়নি ইসরাইলি সেনাবাহিনী।

এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাকি বন্দীদের মুক্ত করার আগে বাকি ইসরাইলি বন্দীদেরও মুক্ত করা হবে এমন নিশ্চয়তা চায় তারা। যদি নিশ্চয়তা পায় তাহলেই কেবল তারা বাকিদের মুক্তি দিবে। এই খবর পাওয়ার মুহ‚র্ত থেকে নিজের আবেগ সামলাতে পারছেন না সদ্য ৫০ বছর পেরোনো দিয়ার মা নাজাত। বৃদ্ধ এই মা বলেছেন, আমি সব কিছু তার জন্য প্রস্তুত করেছি, তবুও সে মুক্তি পেলো না। আমাকে তারা বাধ্য করে বাসায় ফিরে যেতে, কিন্তু আমি চাইছিলাম সেখানেই বসে থাকি, যত দিন না দিয়া মুক্তি পায়। আশা, হতাশা ও ধৈর্যের পরীক্ষার আর কত দিবো ?

১৯৯২ সালে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক কর্মকর্তাকে মারার কারণে কারাবন্দী হন দিয়া। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলি কারাবাসে থাকা ১৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর একজন তিনি। এত দীর্ঘ সময় বন্দী থাকতে থাকতেই তিনি হারান নিজের বাবা ও বোনকে। কারাগারে তাকে ডাকা হয় ‘বন্দীদের অধ্যক্ষ’ নামে। হামাস সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে ইসরাইলি বন্দীদের ফেরত পাঠিয়েছে, তাকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে। ইসরাইলের মতে, এভাবে ফেরত পাঠানো বন্দীদের জন্য রীতিমতো অসম্মানজনক ছিল।

হামাস ভিড়ের মাঝে স্টেজের ওপর বন্দীদের তুলে তারপর তাদের ফেরত পাঠানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বন্দীদের দেহাবশেষ থাকা কফিনও ভিড়ের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, আরও ৬৩ জন বন্দী থাকার কথা গাজায়। যাদের মুক্তি দেওয়ার কথা আছে এই চুক্তিতে। তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন বন্দীর জীবিত থাকার কথা জানা গেছে।

তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আশা ছাড়ছেন না দিয়ার বৃদ্ধ মা নাজাত। ইসরাইলি হামলায় ভেঙে পড়া তার বাসার গায়ে এখনও ঝুলছে একটি সাইনবোর্ড, যার গায়ে লেখা এটা বন্দী দিয়া জাকারিয়া এল আঘার বাসস্থান।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *